Pages

সুরাহ ইউনুস
إِنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَتُ رَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ
﴾৯৬) আসলে যাদের ব্যাপারে তোমার রবের কথা সত্য সাব্যস্ত হয়েছে 
      . সে কথাটি হচ্ছে, এই যে, যারা নিজেরাই সত্যের অন্বেষী হয় না এবং যারা নিজেদের মনের দুয়ারে জিদ, হঠকারিতা , অন্ধগোষ্ঠী প্রীতি ও সংকীর্ণ স্বার্থ বিদ্বেষের তালা ঝুলিয়ে রাখে আর যারা দুনিয়া প্রেমে বিভোর হয়ে পরিণামের কথা চিন্তাই করে না তারাই ঈমান লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থেকে যায়৷
 وَلَوْ جَاءَتْهُمْ كُلُّ آيَةٍ حَتَّىٰ يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ
৯৭) তাদের সামনে যতই নিদর্শন এসে যাক না কেন তারা তখনই ঈমান আনবে না যতক্ষণ না যন্ত্রনাদায়ক আযাব চাক্ষুস দেখে নেবে৷
فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ آمَنَتْ فَنَفَعَهَا إِيمَانُهَا إِلَّا قَوْمَ يُونُسَ لَمَّا آمَنُوا كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَذَابَ الْخِزْيِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَتَّعْنَاهُمْ إِلَىٰ حِينٍ
৯৮) এমন কোন দৃষ্টান্ত আছে কি যে, একটি জনবসতি চাক্ষুস আযাব দেখে ঈমান এনেছে এবং তার ঈমান তার জন্য সুফলদায়ক প্রমাণিত হয়েছে? ইউনুসের কওম ছাড়া    (এর কোন নজির নেই) তারা যখন ঈমান এনেছিল তখন অবশ্যি আমি তাদের ওপর থেকে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনার আযাব হটিয়ে দিয়েছিলাম   এবং তাদেরকে একটি সময় পর্যন্ত জীবন উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছিলাম৷ 
        ইউনুস (আ) (যাকে বাইবেলে যোনা নামে উল্লেখ করা হযেছে এবং যার সময়কাল খৃষ্টপূর্ব ৮৬০ থেকে ৭৮৪ সালের মাঝামাঝি সময় বলা হয়ে থাকে) যদিও বনী ইসরাঈলী নবী ছিলেন তবুও তাকে আসিরিয়াবাসীদের হেদায়াতের জন্য ইরাকে পাঠানো হয়েছিল৷ এ কারণে আসিরিয়াবাসীদেরকে এখনো ইউনূসের কওম বলা হয়েছে৷ সে সময় এ কওমের কেন্দ্র ছিল ইতিহাস খ্যাত নিনোভা নগরী৷ বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এ নগরীর ধ্বংসাবশেষ আজো বিদ্যমান৷ দাজলা নদীর পূর্ব তীরে আজকের মুসেল শহরের ঠিক বিপরীত দিকে এ ধবংসাবশেষ পাওয়া যায়৷ এ এলাকায় ইউনুস নবী নামে একটি স্থান আজো বর্তমান রয়েছে৷ এ জাতির রাজধানী নগরী নিনোভা প্রায় ৬০ মাইল এলাকা জুড়ে অবস্থিত ছিল৷এ থেকে এদের জাতীয় উন্নতির বিষয়টি অনুমান করা যেতে পারে৷
      কুরআনে এ ঘটনার দিকে তিন জায়গায় শুধুমাত্র ইংগিত করা হয়েছে৷ কোন বিস্তারিত বিবরণ সেখানে দেয়া হয়নি৷ (দেখুন আম্বিয়া৮৭-৮৮ আয়াত ,আস সাফফাত ১৩৯-১৪৮ আয়াত ও আল কলম ৪৮-৫০ আয়াত৷) তাই আযাবের ফায়সালা হয়ে যাবার পর কারোর ঈমান আনা তার জন্য উপকারী হয় না৷ আল্লাহ তার এ আইন থেকে হযরত ইউনুসের কওমকে কোন কোন কারণে নিষ্কৃতি দেন তা নিশ্চিতয়তার সাথে বলা সম্ভব নয়৷ বাইবেলে যোনা ভাববাদীর পুস্তক নাম দিয়ে যে সংক্ষিপ্ত সহীফা লিপিবদ্ধ হয়েছে তাতে কিছু বিবরণ পাওয়া গেলেও বিভিন্ন কারণে তা নির্ভরযোগ্য নয়৷ প্রথমত তা আসমানী সহীফা নয় এবং ইউনুস (আ) এর লেখাও না৷ বরং তার তিরোধানের চার পাচশো বছর পর কোন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি ইউনূসের ইতিহাস হিসেবে লিখে এটিকে পবিত্র গ্রন্থসমূহের অন্তরভুক্ত করেন৷ দ্বিতীয়ত এর মধ্যে কতক একেবারেই আজেবাজে কথাও পাওয়া যায়৷ এগুলো মেনে নেবার মত নয়৷ তবুও কুরআনের ইশারা ও ইউনুসের সহীফার বিস্তারিত বিবরণ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করলে কুরআনের তাফসীরকরগণ যে কথা বলেছেন তাই সঠিক বলে মনে হয়৷ তারা বলেছেন, হযরত ইউনূস (আ) যেহেতু আযাবের ঘোষনা দেবার পর আল্লাহর অনুমতি, ছাড়াই নিজের আবাস্থল ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন তাই আযাবের লক্ষণ দেখে যখন আসিরীয়ারা তওবা করলো এবং গোনাহের জন্য ক্ষমা চাইলো তখণ মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাদের কে ক্ষমা করে দিলেন৷ কুরআন মজীদে আল্লাহর বিধানের যে মৌলক নিয়ম কানুন বর্ণনা করা হয়েছে তার একটি স্বতন্ত্র ধারা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ কোন জাতিকে ততক্ষণ আযাব দেন না যতক্ষণ না পূর্নাঙ্গ দলীল প্রমাণ সহকারে সত্যকে তাদের সামনে সুষ্পষ্ট করে তোলেন৷ কাজেই নবী যখন সংশ্লিষ্ট জাতির জন্য নির্ধারিত অবকাশের শেষ মূহূর্তে পর্যন্ত উপদেশ বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারেননি এবং আল্লাহর নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজ দায়িত্বে হিজরাত করে চলে গেছেন তখন আল্লাহর সুবিচার নীতি এ জাতিকে আযাব দেখা সমীচীন মনে করেনি৷ কারণ তার কাছে পূর্নাঙ্গ দলীল প্রমাণ সহকারে সত্যকে সুষ্পষ্ট করে তুলে ধরার আইনগত শর্তাবলী পূর্ণ হতে পারেনি৷